হ্যাকিং এবং হ্যাকার: পর্ব-১

হ্যাকিং আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর  মধ্যে একটা। আজকের তরুণদের পছন্দের দুটি শব্দ হলো হ্যাকার এবং হ্যাকিং। আমরা ইদানিং বেশ কয়েকটি আলোচিত হ্যাক এর কথা শুনছি। পানামা তার মধ্যে অন্যতম একটি। আমাদের দেশে এটিএম কার্ড জালিয়াতি, ব্যাংক ডাকাতির মত গুরুত্বপূর্ণ হ্যাকিং এর খবর আমাদের অজানা নয়। তবে আমাদের মধ্যে হ্যাকিং নিয়ে নানা ভুল ধারণা আছে। অনেকে মনে করে হ্যাকিং মানেই শুধু ফেসবুক আইডি চোর। ব্যপারটা মটেও সেরকম না। হ্যাকার একটা সাফল্য, একটা মর্যাদা, একটা উপাধি। চলুন, আজ হ্যাকিং এবং হ্যাকার নিয়েই আলোচনা করা যাক।
Anonymous


হ্যাকিং এবং হ্যাকার
হ্যাকিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কেউ বৈধ অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। যারা হ্যাকিং করে তাদের বলে হ্যাকার। শুদ্ধ সংজ্ঞা বলতে গেলে, ‘হ্যাকার হচ্ছেন সেই ব্যাক্তি যিনি নিরাপত্তা/অনিরাপত্তার সাথে জড়িত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল দিক খুঁজে বেড় করায় বিশেষভাবে দক্ষ অথবা অন্য কম্পিউটার ব্যবস্থায় অবৈধ অনুপ্রবেশে সক্ষম বা এর সম্পর্কে গভির জ্ঞানের অধিকারী।‘  সহজ কথায়, কোনো কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেটির নিরাপত্তা ভাঙ্গাই হ্যাকারের কাজ।
Ghost squad


এবার আসি হ্যাকারদের প্রকারভেদ সম্পর্কে। কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে হ্যাকারদের মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
1.       হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার: হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার হলো সেই ব্যাক্তি, যিনি কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে ঐ সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিককে বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ত্রুটিগুলো সম্পর্কে অবহিত করে। এই সিকিউরিটি সিস্টেমটি হতে পারে কোনো কম্পিউটার, বা কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইট, বা কোনো প্রোগ্রাম। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা মূলত সাইবার ওয়ার্ল্ডে নিরাপত্তা প্রদান করে। এদেরকে ইথিক্যাল হ্যাকারও বলা হয়। কোনো সিস্টেমে নিরাপত্তা প্রদান করাই এদের কাজ।
2.       ব্লাক হ্যাট হ্যাকার: হ্যাকার বলতে মূলত এদেরকেই বোঝায়। এরা বিভিন্ন সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বেড়ায় শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক অথবা ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এরা কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিগুলো বেড় করলে তা নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায়। ঐ সিস্টেমের ডাটাবেজ নষ্ট করে, কখনও বা বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে  দেয়। অথবা কোনো নতুন ত্রুটি তৈরি করে রাখে, যাতে ভবিষ্যতে আবার সেই সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। কতভাবে অন্যকে নাকানি-চুবানি দেয়া যায়, এটা হিসাব নিকাশ করাই এদের একমাত্র লক্ষ্য।
3.       গ্রে হ্যাট হ্যাকার: এরা হলো হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার এবং ব্লাক হ্যাট হ্যাকার এর মাঝামাঝি অবস্থা। অর্থাৎ, এরা ভালো এবং খারাপ দুটোই করে থাকে। বেশিরভাগ হ্যাকাররাই এই ক্যাটাগরিতে পরে। এরা কোনো সিস্টেমের ত্রুটি সাধন করে কখনো ঐ সিস্টেমের মালিককে জানায়, কখনো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করে। দিনে ভালো-রাতে খারাপ, এরা হলো এই টাইপের।
এখন হ্যাকারদের আরো কিছু চেহারার সাথে পরিচিত হওয়া যাক...
  এলিট হ্যাকার (Elite Hacker): এরা খুবই দক্ষ হ্যাকার। কোনো সিস্টেমকে হ্যাক করার পাশাপাশি দক্ষতার সাথে লুকায়িত হতে পারে। নিত্যনতুন হ্যাকিং কৌশল আবিষ্কার করে। একই সাথে কোনো মেথডকে আরো নিখুঁত করার চেষ্টায় থাকে। এরা প্রোগ্রামিং এ বিশেষ দক্ষ। বিভিন্ন ধরনের হ্যাকিং টুলস এবং এক্সপ্লয়েট মূলত এরাই তৈরি করে থাকে।
ক্র্যাকার: ব্লাক হ্যাট হ্যাকাররাই মূলত ক্র্যাকার (Cracker)এদের কাজ হলো বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম তৈরি করা এবং অনুমতি ছাড়া কোনো কপিরাইট প্রটেক্টেড সফটওয়্যারের কোড ভেঙ্গে ফেলা।
স্ক্রিপ্ট কিডি: এরা প্রোগ্রামিং এ তেমন দক্ষ নয়। নিজেরা কোনো টুলস তৈরি করতে পারে না, অন্যের বানানো টুলস বা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে থাকে। কোনো সিস্টেম হ্যাক করার পর এরা সঠিকভাবে নিজেদের লুকিয়ে নিতেও পারে না।

নিওফাইট: এরা হলো বিগিনার। হ্যাকিং এর নতুন শিক্ষার্থী। হ্যাকিং এর প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা কোনোটাই এদের নেই। এদেরকে নিউবি বা নবুও বলা হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for your comment. Happy Scienceing...