একজন সফল ভবিষ্যতদ্রষ্টা

আজকের কল্পনা, আগামীকালের বাস্তবতা। সবাই কল্পনা করতে পারে না। যারা পারেন, তাদের মাঝে একটি অন্যতম নাম হলো জুলস ভার্ন (Jules Verne)। তার সাহিত্য জীবন প্রধানত শুরু হয় ১৮৫০ সালে। এর পর লিখেছেন টানা ৫৫ বছর। ১৮৫০ থেকে ১৯০৫, এই ৫৫ বছরের সাহিত্য জীবনে তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন টোয়েন্টি থাউজেন্ডস লিগস আন্ডার দ্য সি, জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ, ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন, এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, দ্য মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড, আরো অনেক কল্পবিজ্ঞান। শুধু কল্পবিজ্ঞান বললে ভুল হবে, জুলস ভার্ন এর একেকটি উপন্যাস ছিলো একেকটি স্বপ্ন। যা আমাদের মত বিজ্ঞান প্রেমিদের দেয় রোমাঞ্চ, দেখায় স্বপ্ন, ভাবতে শেখায় নতুন করে।

Jules Verne (1828-1905)
জুলস ভার্নের কল্পনাগুলো ছিলো বিস্তৃত। কতটা সৃজনশীল ও প্রখর চেতনার অধিকারী হলে একজন মানুষ এতোটা দুরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে পারে আমার জানা নেই। তিনি তার লেখায় এমন কিছু কল্পনার কথা লিখে গেছেন, যা একসময় কল্পনা করাও ছিলো যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু এখন তা আমাদের কাছে, দৈনন্দিন তুচ্ছ ব্যাপার। তিনি কল্পবিজ্ঞান লিখতেন, কিন্তু তা কখনই গাঁজাখুরি মনে হত না। প্রতিটি কল্পনার মাঝে উঁকি দেয় আজকের বর্তমান। আর তখনকার জন্য, সোনালী ভবিষ্যত।  আজ আমারা তেমন কিছু কল্পনার কথাই জানবো।







ইলেকট্রিক সাবমেরিন: প্রথম সাবমেরিন তৈরি হয় ফ্রান্সে। ১৮৬৩ সালে, যা চলতো বাতাসের সাহায্যে। ১৮৬৭ সালে স্প্যনিশ প্রকৈশলী নারসিস মনটুরিওল ইঞ্জিনের সাহায্যে সাবমেরিন তৈরি করেন। যেটি পানির নিচে দুই ঘন্টা থাকতে পারতো। ঐ সময় সাধারণত বাষ্প-বাতাস নির্ভর সাবমেরিন তৈরি করতেন। এরপর তারা ১৮৮৮ সালে বৈদ্যুতিক সাবমেরিন তৈরির চেষ্টা করে। ঐ সাবমেরিন প্রকল্পটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। একই সালে ফরাসি নৌবাহিনী জিমনোট নামের একটি সাবমেরিন তৈরি করে। এই সাবমেরিনটি ২০৪ টি ব্যাটারির সাহায্যে চলতো। কিন্তু জুলস ভার্ন তারও ১৮ বছর আগে, অর্থাৎ, ১৮৭০ সালে ইলেকট্রিক্যাল সাবমেরিন এর কথা লিখেছেন তার বিখ্যাত উপন্যাস "টোয়েন্টি থাউজেন্ডস লিগস আন্ডার দ্য সি" উপন্যাসে। তখন সাবমেরিন তো দূরে থাক, ইলেক্ট্রিসিটির মাধ্যমে যে কোনো যানবাহন চলতে পারে, এটাও কারো জানা ছিলো না। এই উপন্যাসে ক্যাপ্টেন নিমোর একটি তিমি মাছের আকৃতির সাবমেরিন ছিলো, যার নাম নটিলাস। যার পুরোটাই চলতো বিদ্যুতের সাহায্যে।
20000 Leagues Under The Sea

বর্তমান সাবমেরিন

নটিলাস
সৌর পালঃ ১৮৬৫ সালে জুলস ভার্ন  ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন  লেখায় পৃথিবী থেকে চাঁদে যাওয়ার একটা যন্ত্রের কথা বলেন। মানুষ সেই যন্ত্রের মাধ্যমে নভো খেয়াযান দিয়ে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ২০১০ সালে জাপান এমন একটি সৌর পাল মহাকাশে উতক্ষেপণ করে। নাসাসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে জুল ভার্নের ভিন্নমাত্রিক আগ্রহ তার কল্পনাকে বিস্তৃত করে দিয়েছে। এ জন্য তাঁকে কল্পনার যাদুকরও বলা যায়।
Solar Sail
নুনার মডুলাসঃ মানুষ চাঁদে যাওয়ার কয়েক যুগ আগে জুল ভার্ন চাঁদে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্রের কথা বলেন। এই যন্ত্রটি ছিলো ত্রিকোণাকৃতি। অনেকটা এখনকার রকেটগুলোর মত। জুল ভার্ন এগুলোর নাম দেন 'প্রোজেক্টাইল'। এই যন্ত্র চালানোর জন্য জুল ভার্ন একটি ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করেন, যা এই প্রজেক্টাইলকে অভিকর্ষের বাধা পেরিয়ে মহাকাশে নিক্ষেপ করবে।
Lunar Modules
স্কাইরাইটিংঃ "ইন দ্য ইয়ার ২৮৮৯" বইয়ে জুল ভার্ন এটমস্ফরিক এডভ্যার্টাইজমেন্ট নামে এক বিশেষ বিজ্ঞাপণ প্রচার পদ্ধতির কথা বলেন। যেই পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপণ আকাশে লেখা থাকবে। সবাই  সে বিজ্ঞাপণ পরতে বাধ্য। তার ২৫ বছর পরে ১৯১০ সালে প্রথম আকাশে লেখার চেষ্টা করার খবর পাওয়া যায়। ১৯৪০ দশকে পেপসি আকাশে বিজ্ঞাপণ লেখা প্রচার করে।


ভিডিও কনফারেন্সিংঃ "ইন দ্য ইয়ার ২৮৮৯" বইয়ে জুল ভার্ন ফোনোটেলিফোটো নামক একটি ব্যবস্থার কথা বলেন, যেখানে মানুষ দূর থেকে কথা বলতে পারবেন এবং তার যুক্ত একটি আয়নায় তারা পরষ্পরের ছবি দেখতে পারবে। ইন দ্য ইয়ার ২৮৮৯ লেখার ১০০ বছর পরে, ১৯৯০ দশকের পরে আমরা ইয়াহু মেসেঞ্জার,  স্কাইপি ইত্যাদির বদৌলতে হরহামেশাই ভিডিও কনফারেন্সিং করে থাকি। ১৯৬০ দশকে বিভিন্ন মহাকাশ মিশন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা শুরু হয়।জুল ভার্ন তারও ৭০ বছর আগে ভিডিও কনফারেন্সিং এর ধারণা দিয়ে যান।


নভোযান অবতরণঃ ১৯৫০ সালের পর থেকে মহাকাশ ফেরত যানগুলোকে বেলুনের সাহায্যে সমুদ্রে অবতরণ করানো হত। ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন গল্পে চাঁদ থেকে পৃথিবিতে আসা নভোযানগুলো সমুদ্রে অবতরনের কথা জানান জুল ভার্ন। ১৮৬৫ সালে লেখা এই উপন্যাস, তারও ১০৪ বছর পর ১৯৬৯ সালে মানুষ চন্দ্র জয় করে। এপোলো ১১ মহাকাশযান বেলুনের সাহায্যে প্রসান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে।


হেলিকাপ্টারঃ "রোবার দ্য কনকুয়েরার" উপন্যাসে একটি বিশেষ যন্ত্রের কথা বলেন জুল ভার্ন। যা পাখার সাহায্যে চলে। সেই সময় হেলিকাপ্টার তৈরির ধারণা প্রচলিত হলেও তা কয়লার মাধ্যমে চালানোর ধারণা করা হত। জুল ভার্ন প্রথম তা বিদ্যুতের মাধ্যমে চলার ধারণা দেন।


টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার ও টক শোঃ ১৯২০-১৯৩০ দশকে প্রথম টেলিভিশন উদ্ভাবনের খবর জানা যায়। ১৯৩০ দশকে লায়েল থমাস প্রথমবারের মত টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপন করেন। শুরুতে  WNBT  চ্যানেলে সেই সংবাদ প্রচার করা হত কয়েক সেকেন্ডের জন্য। ১৯৪১ সালে দিনে দুবার করে সংবাদ প্রচার করা শুরু হয়। এরও ৫১ বছর আগে জুল ভার্ন টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার আর উপস্থাপনার কথা জানান। ইন দ্য ইয়ার ২৮৮৯ বইয়ে জুল ভার্ন লেখেন,
তখন মানুষ এমন উপায়ে সংবাদ দেখবে, যা প্রতিদিন সকালে মানুষকে সংবাদ দেখাবে। সেই সংবাদ অনুষ্ঠানে রাজনিতীবিদ, সাংবাদিক আর বিজ্ঞানীদের নিয়ে আলোচনা করবেন। 
 সেই ধারাবাহিকতায় বলা যায় আজকের যে টক শো আমরা দেখি, তা শত বছর আগে জুল ভার্নই ধারণা করে গেছেন।

আজ যা কল্পনা, তা আগামীকালের বাস্তবতা। জুল ভার্ন একজন সফল কাল্পনার পথিকৃত, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন ভবিষ্যতদ্রষ্টা। কল্পনা করতে থাকো, আগামী পৃথিবী তোমার কল্পনার মাঝেই বাস্তব দেখবে। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তথ্য ও আইডিয়া: কিশোর আলো

আসুন মহাবিশ্বকে চিনি-জ্যোতির্বিজ্ঞান ১

মহাবিশ্বের রুপ
আমাদের চির চেনা মহাবিশ্ব

'আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমাদের পরিবেশ।' পরীক্ষায় ১ নম্বর পাওয়ার জন্য সামাজিক বিজ্ঞানের এই সংগা ছোটবেলায় আমরা সবাই মুখস্ত করেছি।কিন্তু কি আছে আমাদের চারপাশে?
নদী-নালা,খাল-বিল,গাছ-পালা,ব্রীজ,পাহাড়,দোকান,স্কুল,কলেজ,গরু-ছাগল,ভূত-পেত্নি___ইত্যাদি ইত্যাদি। এর বাইরে কি কিছু নেই? পৃথিবী নামক গ্রহের পরিবেশটার চিত্র এরকমই। কিন্তু পৃথিবীর বাইরের জগত্‍,পরিবেশ চেনার আগ্রহ আদিম কাল থেকেই মানুষ চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দু। এই চিন্তা-চেতনা থেকেই হোমো সেপিয়েন্স পরিচিত হয় 'মহাবিশ্ব' শব্দটার সাথে। কিন্তু তখন আমরা মহাবিশ্বকে চিনতাম না। মাহাবিশ্ব সম্পর্কে এখন আমরা যেটুকু জানি,সেটুকু জানতে আপেক্ষিক তত্ত্ব,কেন্দ্রিক পদার্থবিজ্ঞান,কণা পদার্থবিজ্ঞান,তাপগতিবিজ্ঞান,প্লাজমা ইত্যাদি এবং সর্বোপরি জ্যোর্তিপদার্থবিজ্ঞানের পেছনে কাছা মেরে ছুটতে হয়েছে। মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করতে গেলেই প্রথম যে প্রশ্নটা মাথায় আসে তা হলো,এই মহাবিশ্ব এলো কোথা থেকে? কিকরে হলো এর উত্‍পত্তি? কবেই বা হলো? 
বহুপ্রাচীন গ্রিক,রোমান ও ভারতীয় ঐতিহ্য এবং ইহুদি,খ্রিস্টান,ইসলাম তিনটি আব্রাহামিক ধর্মমতে মহাবিশ্বের উত্‍পত্তি ঘটেছিল খুব নিকট অতীতে। সপ্তদশ শতাব্দীতে বিশপ উসার (Bishop Ussher) হিসাব করে বলেছিলেন মহাবিশ্বের উত্‍পত্তি ঘটেছিল ৪০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।
Bishop Ussher
তিনি এই হিসাব বের করেছিলেন মজার একটা প্রক্রিয়ায়। বিশপ ওল্ড টেস্টামেন্টের মানুষদের বয়স যোগ করে এই হিসাব পেয়েছিলেন। উনি ধারণা করেছিলেন মহাবিশ্ব ও মানুষ একই সাথে উত্‍পত্তি লাভ করেছিল। দর্শনতত্ত্বের কারণে এই ধারণা বহুআগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সহ তত্‍কালীন (এরিস্টটলের আগে ও পরে) কিছু দার্শনিক ধারণা দিয়েছিলেন মহাবিশ্বের উত্‍পত্তি ঘটেছে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপে এবং মহাবিশ্ব ও মানুষ সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে। অবশ্য তখনও বেশ কিছু ধর্মের প্রচলন ছিল। তবে দার্শনিকগণ একটি গূঢ় বাক্য ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিল।তা হলো, মহাবিশ্বকে না জানতে পারলে এটি কবে,কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা জানা অসম্ভব। এই মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্সটা আসলে কি? 

সহজ ভাষায় উত্তর-যা বিদ্যমান তার সমষ্টিই হলো মহাবিশ্ব। পরিবেশের উপাদান থেকে এবার চিন্তাধারা প্রমোশন পেল,এসে দাড়াল মহাবিশ্বের উপাদানে। দার্শনিকগণ ঢক ঢক করে পানি পান করার মতই মহাবিশ্বের উপাদান সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ধারণাগুলো রিমিক্স করলে অনেকটা এরকম দাড়ায়-'পৃথিবী মহাবিশ্বের একটা অংশ। শুধু পৃথিবী নয়,চাঁদ,তারা,সূর্য সবই মহাবিশ্বের অংশ।'
তত্‍কালীন ক্ষুদ্র সূর্যপূজারী গোষ্ঠী হিলিয়াম বেলুনের মত ফুলে ফেপে ওঠে এ তত্ত্বে,বিরোধিতাও চলে তাল মেপে। সৌরজগত্‍ এর ধারণাও ছিল বিরোধিতার কেন্দ্রে। সূর্যকে তারা জ্বলন্ত গ্যাসের বল হিসেবে মেনে নিতে পারছিল না। যদিও তার সংখ্যালঘু ছিল। বাকি সমাজে উক্ত ধারণাগুলো জোয়ারের মত বয়ে চলছিল। লোকদের মূল আলোচনা আর জনপ্রিয়তার শীর্ষ ছিল বিস্ময়কর এই মহাবিশ্ব।

বৈজ্ঞানিক তাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ,প্রমাণসহ মহাবিশ্বের সার্জারি শুরু হয় স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত (theory of general relativity) প্রণয়নের পর।১৯১৬ সালে। মহাকর্ষকে স্থানকালের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা যায় আপেক্ষিক তত্ত্বে। স্যার আইজ্যাক নিউটন এই জিনিসটা খেয়াল করেন নি যে, মহাকর্ষ তত্ত্ব মহাবিশ্বের উত্‍পত্তি সম্পর্কিত কৌতুহল ধারণ করে আছে। আসলে নিউটন স্যার তার অনেক কাজকর্মের মাহাত্মগুলা ঠিক ঠাক বুঝত না বা বোঝার চেষ্টা করত না। হ্যালি কিন্তু এই ব্যাপারগুলোতে নিউটনকে সাহায্য করত। যে হ্যালিকে আমরা ধূমকেতুর পরিচায়ক হিসেবে জানি ও সম্মান করি। অসাধারণ কৌতুহলি এই হ্যালি বন্ধুর মত নিউটনের পাশে ছিলেন সেসময়। যাই হোক,নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল বস্তুকণাই পরষ্পরকে আকর্ষণ করে। এখন সমস্যা হলো,এই আকর্ষনের জন্য তো সব বস্তুরই এক যায়গায় মিশে যাওয়ার কথা। আর গ্রহগুলো কেন সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথে না ঘোরে উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে তাও একটা প্রশ্ন ছিল। নিউটন এরও উত্তর জানিয়ে গেছেন।
'আকর্ষন মান দূরত্বের ব্যাস্তানুপাতে ক্রিয়া করে।' কিন্তু তবুও, মহাকর্ষের প্রভাবে মহাবিশ্ব কখনও চিরস্থায়ী থাকতে পারে না। 

এবার মহাবিশ্ব সম্পর্কিত চিন্তাধারায় সাইক্লোন তৈরি করেন এডউইন হাবল (Edwin Hubble)। ১৯২৯ সালে তিনি আবিষ্কার করেন যে মহাবিশ্ব স্থির না। এটির প্রসারণ ঘটে চলছে। সব ধারণা,তত্ত্বের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় এই আবিষ্কার। 
এর পরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো বৃহত্‍ বিস্ফোরণ তত্ত্ব বা big bang theory ।
 বিগ ব্যাংগ থিওরি বলে,-'আজ থেকে ১৫০০-২০০০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সকল বস্তুই একটা কেন্দ্রে পূঞ্জিভূত ছিল। যার আকার অনেকটা ডিমের মত ছিল। এর ডিমের ভেতর চলত প্রচুর চাপ,প্রচুর তাপ,সীমাহীন এনার্জির লড়াই। ডিমটার তা আর সহ্য হয় না। বিশাল এক বিস্ফোরণ ঘটে ডিমটির। আজকের গ্রহ,নক্ষত্রসহ সকল পদার্থ,স্থান,কাল ও শক্তি সবকিছুই এই বিস্ফোরন থেকে উত্‍পত্তি লাভ করে।' 
আর এগুলো প্রতিনিয়ত দূরে সরতে থাকে পরষ্পরের কাছ থেকে। প্রতিটি বস্তুকণাই একটা নির্দিষ্ট হারে,নির্দিষ্ট বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। দূরে সরতে সরতে এগুলো একসময় এমন এক অবস্থায় পৌঁছাবে, যা হবে এদের শেষ সীমা। এদের দূরে সরে যাবার গতি এদের দূরত্বের সমানুপাতে পরিবর্তিত হয়। অর্থাত্‍, যার দূরত্ব যত বেশী, তার পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাবার গতিবেগও তত বেশি।


সালটা ১৯৬৫। আর্নো পেনজিয়াস (Arno Penzias) ও রবার্ট উইলসন (Robert Wilson) নিউজার্সির বেল টেলিফোন ল্যাবে একটি মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা দিয়ে একটা অদ্ভুদ তরঙ্গ ডিটেক্ট করেন। তারা বলেন,'এটি মহাবিস্ফোরনের ফলে আলোক তরঙ্গ সরে গিয়ে লাল রংয়ের তরঙ্গসীমা পেরিয়ে মাইক্রোওয়েভে পরিণত হয়েছে।'
তারা তাদের এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পায়।।।
______________________________________________

চালিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে। লেখায় কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।...

সময়


সময় নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণী। আমাদের অনুভবে শুধু মাত্র তিনটি মাত্রাই বিদ্দমান। তাই হয়ত এই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে আমাদের যেটুকু জানা আছে, সময় সম্পর্কে সেই ধারণাটুকুও নেই। অন্য তিনটি মাত্রার মত আমরা সময়কেও একটি মাত্রা হিসেবেই নেই। কিন্তু না, সময়কে অন্য মাত্রাদের সাথে তুলনা করা যায় না। অন্য মাত্রায় সময় পরিভ্রমনের মত সপ্ন মানুষ দেখে না। টাইম মেশিনের মত লেন্থ মেশিন বা ওয়াইড মেশিন নিয়ে বিজ্ঞানীগণ সারা জীবন ব্যয় করে না। কিন্তু মাত্রাগুলর সাদৃশ্য সহজেই অনুধাবন করা যায়ঃ
প্রত্যেকটি মাত্রাকেই আমরা শুধু পরিমাপই করতে পারি। দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা পরিমাপের জন্য স্কেল,স্লাইড ক্যলিপার্স ইত্যাদি, আর সময় পরিমাপের জন্য ঘড়ি,স্টপ ওয়াচ। তবে অন্য মাত্রাগুলোকে আমরা নির্দিষ্ট বস্তুর জন্য নিয়ন্ত্রন বা নির্ধারণ করতে পারি। সময়ের ক্ষেত্রে তা একটু অন্য রকম হয়ে পরে। কিছু কিছু বিজ্ঞানী বা চিন্তাবিদ একটা ধারণা পোষণ করেন এ ব্যপারে। যা অনেকটা এরকমঃ
‘আমরা ত্রিমাত্রিক। আমাদের মাত্রায় সময় নেই। তাই সময়ের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই, কোনোদিন থাকবেও না।‘
কিন্তু আমরা সময় পরিমাপ করতে পারি। অর্থাৎ সময়ের ওপর আমাদের পুরোপুরি কোনো হাত নেই, এটা বলা হয়ত একটু ভুল হবে।

কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে তার উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হয়। কাজেই সময় সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই সময়ের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেই সামনে আসে একটি অমিমাংশিত প্রশ্ন।
আমরা সকলেই এখন স্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যং থিওরি সম্পর্কে জানি। থিওরি থেকে অন্তত এইটুকু জানা যায় যে, পৃথিবীর সকল পদার্থ (যেহেতু অপদার্থ বলে কিছু নেই ) এবং শক্তি (যেমন আলো,তাপ,গতি) সেই বৃহৎ বিস্ফরণের ফলে সৃস্টি হয়েছে। কিন্তু মাত্রা?
দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা কিংবা সময় এগুলোর উৎপত্তির ব্যাখ্যা বিগ ব্যংগ থিওরি দিতে পারে না। তাহলে এই মাত্রাগুলোর উৎপত্তি হলো কোথা থেকে? হয়তবা আমাদের একটু মাল্টিভার্স থিওরির দিকে চোখ বোলাতে হবে। আমি এই থিওরি সম্পর্কে যেটুকু জানি তা বলে, মাত্রা হলো এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের ধ্রুবক। যা চিরন্তন। উক্ত বৃহৎ বিস্ফরণ এর ফলে শুধু মাত্র এর ব্যপ্তি ঘটে। যখন শুধু এই মাত্রারই নয়, যাবতিও পদার্থ এবং শক্তিরও ব্যপ্তি ঘটে এই বিস্ফরণের মাদ্ধমে। মাল্টিভার্স থিওরি এও বলে যে, আমরা যেই মহাবিশ্বের ধারণা পোষণ করি, এমন মহাবিশ্ব আরো বিদ্যমান। আমাদের অগোচরেই আরো বৃহৎ বিস্ফরণ ঘটে চলেছে অথবা ঘটেছে, মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ত থাকাকালেই।।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধ্যান ধারণার শুরু সেই প্রাচীনকাল থেকেই। গ্রহ,নক্ষত্র আর পৃথিবী নিয়ে যত সাধনা করা হয়েছে তার ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না। তবে মাত্রা সম্পর্কিত জ্ঞান সাধনা করা হয়েছে সম্ভবত আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের পর। তার আগে যদিও বা হয়ে থাকে তা কতটা অগ্রগতি লাভ করেছিলো তা সন্দেহজনক। তবে সময় পরিভ্রমণকে মাত্রা পরিভ্রমণও বলা যায়। মাত্রা বা মাত্রিক পরিভ্রমণের ব্যপারটা শুধু যে গোলমেলে তাই নয়, মাত্রিক পরিভ্রমণের চিন্তা করতে হলে আমাদের চিন্তা কম পরবে। মাত্রিক পরিভ্রমণের ওপর একটা ফিকশন পরেছিলাম। যার নাম সম্ভবত “মাত্রাহীন যাত্রা”। 
এই ফিকশনে মাত্রিক পরিভ্রমণের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা অনেকটা ফিকশন থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে মাত্রা বা ডাইমেনশন এর ব্যাখ্যা করা খুব সহজ কাজ নয়। আমরা ত্রিমাত্রিক, চতুর্মাত্রা সম্পর্কে আমরা অনেকটা অবুঝ প্রাণী। কারন আমরা কখনো চতুর্মাত্রা সম্পর্কিত কোনো অনুভব লাভ করি নি। সময় নামক মাত্রাকে আমরা কেবল পরিমাপই করতে পারি, সময়ের সংগাকেও ঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি না।
মাত্রার সাথে শক্তির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এটাও একটা প্যারাদায়ক প্রশ্ন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শক্তিকে স্বাধীন বলেই মনে হয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় শক্তির ওপর আধিপত্ত করে মাত্রা। এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে মাত্রা ছাড়া শক্তিকে কল্পনাও করা যায় না। খুব সাধারণ ভাবেই প্রশ্ন করা যায়, যেখানে সময় নেই সেখানে গতিশক্তি বা অন্যান্য শক্তির অস্তিত্ত্ব কিকরে থাকতে পারে?
-এর ব্যাখ্যা আমি এখনো পাই নি।

এবারে আসি বস্তু বা পদার্থের ক্ষেত্রে।
বস্তু কি মাত্রার অধীন? উত্তর-হ্যাঁ। যেখানে শক্তি মাত্রার অধীন, সেখানে বস্তুর প্রশ্ন তুলতে হবে বলে আমার মনে হয় না। একবার ভাবুন তো, যদি সময় না থাকত তাহলে মহাবিশ্বটা কেমন হত? আমি যখনি এই নিয়ে ভাবি, তখোনি সায়েন্স ফিকশনের মত একটা উত্তর মাথায় আসে। তা হল ‘পৃথিবী থেমে থাকবে’। কিন্তু তাহলে আমাদের অস্তিত্তই থাকত না। এই কয়েকশ মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের মাদ্ধমে যে মানুষের উদ্ভব হয়েছে, তা কি করে হত? আচ্ছা, সময়ের কথা বাদ দিলাম। খুব সাধারণ একটা মাত্রা দিয়েই উদাহরণ দেয়া যায়। দৈর্ঘ্যের অস্তিত্ত না থাকলে কি হত? বস্তু কি দৈর্ঘ্য বিহীন হত? কেমন হত সেই বস্তু?
আমাদের অতি পরিচিত মাত্রা দৈর্ঘ্যই আমাদের আটকে দিলো, তাহলে চতুর্থ মাত্রা সময় নিয়ে এমন প্রশ্ন করার আগে we better have to prepare ourselves… 
মাঝে মাঝে নিজেকেই মাত্রাহীন মনে হয়। সবকটি মাত্রা জেনো আমাদের নিয়ে খেলা করছে। আমরা এই মহাবিশ্বে খেলনা মাত্র। আমাদের নিয়ে খেলছে মহাকাল,প্রকৃতি আর মাত্রা।
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে হয়, সময়ের পরের মাত্রা কি? তারপরের? তারপরের?...............